
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান
ট্রেনে জঙ্গি হামলা জিম্মি ৫শ’ যাত্রী
- আপলোড সময় : ১২-০৩-২০২৫ ০২:১৩:৫৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১২-০৩-২০২৫ ০২:১৩:৫৬ অপরাহ্ন


* জঙ্গি হামলা মোকাবেলায় বেলুচিস্তান সরকারের জরুরি পদক্ষেপ
* খনিজসমৃদ্ধ বেলুচিস্তানে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে জঙ্গিরা
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে ট্রেনে হামলা চালিয়ে ৫ শতাধিক যাত্রী জিম্মি করে রেখেছে জঙ্গিরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে কোয়েটা থেকে পেশাওয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেন সশস্ত্র হামলাকারীরা। তবে হামলার পর এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়নি। খবর পাকিস্তান ডন
রেলওয়ের কন্ট্রোলার মোহাম্মদ কাশিফ জানান, ট্রেনটি ৯টি কোচ নিয়ে প্রায় ৫০০ যাত্রীসহ কোয়েটা থেকে পেশাওয়ার যাচ্ছিল। ট্রেনটি যখন বেলুচিস্তানের বোলান জেলার এলাকার টানেল নম্বর ৮-এর কাছে পৌঁছায়, তখন সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা সেটি থামিয়ে দেয়। এরপর ট্রেনটি একটি পাহাড়ি অঞ্চলে আটকে পড়ে, যেখানে উদ্ধার কার্যক্রমে বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, যেখানে ট্রেনটি থেমেছে, সেখানে একটি পাহাড়ি এলাকা রয়েছে, যা সন্ত্রাসীদের আক্রমণ পরিকল্পনার জন্য আদর্শ জায়গা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ি অঞ্চলের কঠিন ভূপ্রকৃতির কারণে সন্ত্রাসীরা সহজেই আড়াল হয়ে আক্রমণ চালাতে পারে।
বেলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ এ ঘটনায় মন্তব্য করতে গিয়ে জানান, আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছি। সিবি হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে এবং উদ্ধারকর্মী ও নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়েছে। তবে, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় সেখানে পৌঁছাতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
এদিকে, ট্রেনের যাত্রীদের উদ্ধার করতে রেলওয়ে বিভাগ অতিরিক্ত ট্রেন পাঠিয়েছে এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং গুজব থেকে দূরে থাকার অনুরোধ করেছেন।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী মোহসিন নাকভি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা নিরপরাধ যাত্রীদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়, তাদের কোনো রেহাই দেয়া হবে না। তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেন। একইভাবে, সিন্ধু প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী জিয়াউল হাসান লাঞ্জরও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, দেশবিরোধী এবং সমাজবিরোধী শক্তির কুকীর্তি কখনো সফল হতে দেয়া হবে না।
পাকিস্তানে গত কয়েক মাসে বেলুচিস্তানসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে গেছে। গত নভেম্বরে কোয়েটা রেলওয়ে স্টেশনে এক আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ২৬ জন নিহত এবং ৬২ জন আহত হয়েছিলেন। এছাড়া, গত এক বছরে বেলুচিস্তানে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ)-এর হামলা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে, যা নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন যে, বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়া (কেপি) প্রদেশে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি এখন উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে, এবং সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
এটি একটি চলমান ঘটনা এবং প্রাথমিক রিপোর্টে তথ্যের অমিল থাকতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে যাতে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। জনগণকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তারা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলেন এবং গুজব থেকে দূরে থাকেন।
বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী কয়েকটি গোষ্ঠীর মধ্যে সবেচেয়ে আলোচিত দ্য বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী দ্য বেলুচ লিবারেশন আর্মি সম্প্রতি প্রদেশজুড়ে বেশ কয়েকটি হামলার দায় স্বীকার করেছে। বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানের খনিজসমৃদ্ধ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। স্বাধীন বেলুচিস্তানের দাবিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছেন তারা। এই প্রদেশে সোনা ও তামার খনি ছাড়াও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ গোয়াদর বন্দর রয়েছে। দেশটির এই বন্দরে চীনের ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ